” “

Monday 6 July 2020

আমেরিকায় নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভ্রমণের স্মৃতি আজও আমার মনে উজ্জ্বল

চৈতালি চ্যাটার্জী


“আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে”

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের মাঝামাঝি Whatsapp-এ চ্যাট করতে করতে হঠাতই ভাইঝি টিঙ্কুর নিমন্ত্রণ এলো আমেরিকাতে ওদের বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার জন্য বেশি কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেলাম, দেশ বেড়াবার সখ আমার ছোটবেলা থেকেই ১৬ মে ২০১৬, ব্যাগ গুছিয়ে একাই রওনা দিলাম

আমেরিকায় পৌঁছে ওখানকার নানা দর্শনীয় স্থান ঘোরার পর সেই বহু অপেক্ষার নায়াগ্রা ফলস দেখতে গেলাম টিঙ্কু, সৌরভ আর ওদের দু’বছরের ছেলে মিকাই-এর সাথে Baltimore থেকে নায়াগ্রা যেতে সময় লাগলো প্রায় ৮ ঘন্টা সৌরভ নিজেই গাড়ি চালিয়ে নিয়ে গেল
নায়াগ্রা জলপ্রপাত-এর সামনে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে নির্বাক চেয়ে রইলাম স্বপ্নের মত মনে হল প্রকৃতি তার সমস্ত রূপ-রস-সৌন্দর্য আর বিশালতা নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে, চোখ সার্থক হলো, জীবন সার্থক হলো তারপর আমরা ‘Maid of the Mist’ boat tour-এর জন্য প্রস্তুত হলাম এর জন্য নীল রং-এর rain poncho আর বিশেষ জুতোর প্রয়োজন হয় Maid of the Mist-এর নৌকা বিহার প্রায় নায়াগ্রার ঝর্ণার ভেতর পর্যন্ত নিয়ে যায় সেই ঝর্নার বৃষ্টিস্নান (Mist) এক অনির্বচনীয় রোমাঞ্চকর অনুভূতি  


নায়াগ্রার আরো একটি অন্যতম আকর্ষণ হলো Cave of the Winds, যেটি  Bridal Veils Falls এর  পেছনে একটি Natural Cave-এর মত একটি narrow wooden passage way দিয়ে
২০০টি কাঠের সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে পারলে একদম Bridal Veils-এর সামনে পৌছে যাওয়া যায় খুব সন্তর্পনে ধীরে ধীরে অন্য পর্যটকদের সাথে আমিও খাড়া খাড়া সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলাম ওপরের মনোরম দৃশ্য প্রাণ জুড়িয়ে দিল এ এক কল্পলোক এও এক অনন্য অভিজ্ঞতা     
  
Maid of the Mist, Cave of the winds এবং Niagara State park ঘোরার পর আমরা lunch সেরে হোটেলে ফিরে এলাম

সন্ধ্যেবেলা Niagara Falls Light Show দেখতে যাওয়ার কথা রাতের অন্ধকারে জলপ্রপাতের ওপর নানা রঙের আলোর খেলা শুনেছিলাম দেখার মত কিন্ত বিকেল থেকেই মিকাই এর হঠা জ্বর এসে গেল তাই টিঙ্কুরা আর বেরোতে পারল না এত দূর এসে Light Show না দেখে ফিরে যেতে আমার ইচ্ছে করল না তাই ঠিক করলাম আমি একাই Public Shuttle bus-এ ঘুরে আসি হোটেল থেকে নায়াগ্রা পর্যন্ত যেতে ১৫/২০ মিনিট সময় লাগে একটা Indian Restaurant (Punjabi)-এ Buffet Dinner-এর পর সন্ধ্যে আটটার shuttle-এ সৌরভ আমাকে তুলে দিল Bus-এ উঠে দেখি বিরাট বাসটিতে অন্য কোনো যাত্রী নেই, একজন বয়স্ক মহিলা বাসটি চালাচ্ছিলেন আমি ওনার ঠিক পেছনের সিটে গিয়ে বসলাম আমাকে একা এভাবে দেখে উনি অবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন ‘‘তোমার ভয় করছে না, এরকম বিদেশে এসে একা একা সন্ধ্যেবেলা বেরিয়ে পরেছ” আমি হাসলাম, কিছু বললাম না ‘‘বেশি দেরী করো না যেন, ১০ টার Last shuttle-টাতে ফিরে এসো, তার পরে আর কিছু পাবে না”, উনি অনেক বার বললেন আমি কিছু ক্ষণ পর ওনাকে বিদায় জানিয়ে গন্তব্যস্থানে পৌঁছে গেলাম

রাতের বেলা নায়াগ্রার বুকে আলোর খেলা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম এ কি অপরূপ শোভা! জলের গর্জন আর রঙের খেলা মিলেমিশে যেন এক অপার্থিব মায়াজগত সৃষ্টি করেছে

কিন্তু খুব বেশি ক্ষণ সেখানে থাকি নি ১০টার  shuttle বাসটা ধরতেই হবে ধীরে ধীরে বাস স্ট্যান্ড-এ পৌঁছলাম তখন বাজে সাড়ে ন'টা তত ক্ষণে অন্য পর্যটকরা নিজেদের গাড়িতে ফিরতে শুরু করেছে, তারপর দেখি ১০টা বাজলো, সাড়ে ১০টা, ১১ টা …………………..রাত বাড়তে লাগল, shuttle আর আসে না, সমগ্র এলাকাটা তখন জনহীন, সবাই যে যার ঘরে ফিরে গেছে, কী করব কিছু বুঝতে পারছি না রাত ১২টা বেজে গেল এবার একটু একটু ভয় করতে লাগলো তবু জানি সর্বশক্তিময় ঈশ্বর আছেন এই কথা ভেবে মনে মনে ঠাকুরকে ডাকতে লাগলাম হঠা দেখি সামনে একটা ট্যাক্সি এসে দাড়ালো “আপকো কাহী জানা হ্যায়, ম্যায় বহত দের সে আপকো দেখ রাহা হু”  হিন্দিতে প্রশ্ন করলেন মধ্য বয়স্ক গাড়ির চালক আচমকা হিন্দি শুনে থমকে গেলাম ট্যাক্সি চালক বললেন “আপকো পহচা দুঙ্গা, মেরে গাড়ি মে আ যাইয়ে” কিছু ভাবার আগেই আমি গাড়িতে গিয়ে বসে পরলাম উনি বললেন এখানে যথেষ্ট যাত্রী সংখ্যা না হলে অনেক সময় shuttle cancel করে দেয় ১০টার বাসটা আর আসবে না রাস্তায় যেতে যেতে উনি নিজের গল্প করতে লাগলেন ওনার বাড়ি লাহোরে, দীর্ঘকাল ধরে আমেরিকাতেই বসবাস করার জন্য এখন মার্কিন নাগরিক ট্যাক্সি চালানই পেশা, ছেলে US Army-তে কাজ করে ওনার কথা বলার ভঙ্গি শুনে মনে হচ্ছিল আমি যেন ওনার কত কালের চেনা আমাদের যে দেশ আলাদা, ভাষা আলাদা, ধর্ম আলাদা সে কথা এক মুহূর্তের জন্যও মনে এলো না

কথা বলতে বলতে কখন যে হোটেল এ পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না ভাড়া দেবার সময় উনি বললেন “মুঝে কুছ কম দিজিয়ে, ইতনে দিনো কে বাদ মেরে দেশ কি কিসিসে আপনে ভাষা মে বাত করনে কা মৌকা মিলা, ইসসে জাদা খুশি আউর কিয়া হো সকতা হ্যায় আপকো দেখকে মুঝে লাগতা হ্যায় আপনি বহেন মিল গয়া” শিকড়ের টান কত গভীর! ওনার চোখ ছলছল করে উঠলো, তারপর নিমেষের মধ্যে ট্যাক্সি নিয়ে দূরে চোখের নজরের বাইরে ……..… নীরবে নির্জনে আমি দাড়িয়ে রইলাম একা

How to reach Niagara Falls
নায়াগ্রার nearest airport হল Buffalo দূরত্ব প্রায় ২৭ কিলোমিটার Buffalo থেকে Niagara Falls পর্যন্ত প্রচুর shuttle bus চলে যারা India থেকে যেতে চান তাদের  প্রথমে by air নিউ ইয়র্ক যেতে হবে নিউ ইয়র্ক থেকে এরোপ্লনে Buffalo যাওয়া যায় কম খরচে যেতে চাইলে নিউ ইয়র্ক থেকে Buffalo-র জন্য ট্রেন এবং বাসেরও ব্যবস্থা আছে
থাকা খাওয়ার ব্যবস্থাও খুব ভালো নানা রকম standard-এর হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট প্রচুর পরিমাণে আছে, এমনকি ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টও আছে

(Excerpt from Chaitali’s US Diary, May 2016) 

4 comments:

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. Chaitali ki bhalo likhecho.. ashadharon experience

    ReplyDelete
    Replies
    1. তুমিও তো এমন লিখতে পার।

      Delete
  3. খুব ভালো হয়েছে। এই ভাবে সব ভ্রমন ই লিখে রেখো।

    ReplyDelete