” “

Tuesday 7 July 2020

শব্দগাঁওয়ে এক নিঃশব্দ বিপ্লব

রবি রায়
(মার্চ, ২০০০৪-এ রচিত ও ইতিপূর্বে একটি পত্রিকায় প্রকাশিত। বর্তমান লেখাটিতে কিছু নতুন তথ্য সংযোজন হয়েছে যা সর্বশেষ (২০১৫) সংগৃহীত।)
আমরা তো জানি স্বরাজ আনিতে পোড়া বার্তাকু এনেছি খাস,/কত শত কোটি ক্ষুধিত শিশুর ক্ষুধা নিঙাড়িয়া কাড়িয়া গ্রাস,/এল কোটি টাকা এল না স্বরাজ/টাকা দিতে না রে ভুখারী সমাজ/মার বুক হতে ছেলে কেড়ে খায় মোরা বলি বাঘ খাও হে ঘাস।”
মধ্য বিহারের এক অজ গ্রাম- নাম তার ‘শব্দ’। বিগত কয়েক বছরে এ গ্রামেই ঘটে গেছে নিঃশব্দে এক বিপ্লব। গোটা দেশের মধ্যে আজ এটিই একমাত্র গ্রাম যেখানে চলে সমষ্টিগত চাষ। সারা বছরে সেচের জল পায় চাষিরা। পরিবেশ সচেতন এই গ্রামে দূষণ নেই। সব শিশু স্কুলে যায়। নেই জাতপাতের লড়াই। এই গ্রামে মদ খায় না কেউ। ভাবা যায়! এবং সর্বোপরি এই গ্রামের মানুষ নিজেদের পায়ে দাঁড়ানোর এক অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে, সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে স্থানীয় ভিত্তিতে প্রাকৃতিক আর মানব সম্পদকে সুচারুভাবে কাজে লাগিয়ে সৃষ্টি করেছে উন্নয়নের এক নয়া নজির।  


শব্দগাঁওয়ের দুই রূপকার মহেশ ও সরিতা।

কয়েক মাস আগে এক সংবাদপত্রে (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৫ ও ২৬ অক্টোবর, ২০০৩) এই গ্রামের মানুষের জেগে ওঠার কাহিনী প্রথম প্রকাশিত হয়। তার আগে এই গ্রামের মানুষের কথা আমাদের গোচরে আসেনি। সম্প্রতি শব্দগাঁওয়ের দুই রূপকার খুন হওয়ার পর দেশ জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জানা যায় আরও অনেক অজানা তথ্য।
অন্ধকারে আলোর দিশা
গয়া জেলার ফতেপুর ব্লকের অন্তর্গত এই শব্দগাঁও বছর চারেক আগেও ছিল বিহারের আর পাঁচটা গ্রামের মতই। সামন্ত ব্যবস্থা আইনত অবলুপ্ত হলেও এ অঞ্চলে সামন্তশোষণ আর মাফিয়াদের দাপট সকলেরই জানা। শব্দগাঁওয়ের বৈশিষ্ট্য হল এই গ্রামে কেবল যাদব সম্প্রদায়ের মানুষেরই বাস আর কোন পরিবারই ভূমিহীন নয়, পারিবারিক জমির মালিকানা ২ বিঘা থেকে ১২-১৩ বিঘার মত। আর বিহারে জাতের বিচারে তারা নিম্নবর্গের বলেই বিবেচিত হয়।ততা তততারা নানা বৈষম্যের শিকার হলেও তারা তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না। বরং তাদের নিজেদের মধ্যেই সর্বদা লেগে থাকত বিবাদ – কখনো জমির আল নিয়ে, কখনো আলের উপর ঘাস কাটা নিয়ে। রুখাসুখা পরিবেশ। এক ফসলি জমি, সেচের জলের বড় অভাব। জলের অভাবে মার খেত চাষবাস। তাই আল কেটে জল চুরি নিয়েও লেগে থাকত নিজেদের মধ্যে হানাহানি। সন্ধ্যা হলেই গ্রামের বেশির ভাগ পুরুষ মদে চুর হত। এ গ্রামের বাচ্চারা কেউ স্কুলে যেত না। আর সব বাড়িতেই ছিল খাটাল। ফলে পরিবেশ হত দূষিত আর ছড়াত রোগ।
বছর চারেক আগে গ্র্রামের মানুষের জন্য কিছু একটা করার তাগিদে এ গ্রামের প্রান্তে ডেরা বাঁধেন দুই যুবক-যুবতি, মহেশকান্ত ও সরিতা। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিদ্যার এম.এ. সরিতা প্রথম জীবনে ছিলেন নকশাল আন্দোলনে – সি.পি.আই(এম-এল)দলের কর্মী। তার বাবা ও মা-ও এই দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। বাবা রামদাস যাদব জরুরি অবস্থার সময় ১৯৭৬ সালে গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। ছিলেন ভাগলপুর জেলে। জেল ভেঙে পালাবার সময় পুলিশের গুলিতে মারা যান তিনি। সরিতা অবশ্য নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে এক সময় হতাশ হয়ে পড়েন। তবে ঘরে বসে রান্নাবান্না ও সন্তান পালন করে জীবন কাটাতে চাননি তিনি। পরিচয় হয় মহেশের সাথে। হরিয়ানার এক সম্পন্ন জাঠ পরিবারের ছেলে মহেশ পাটনায় ব্যবসা করতে এসে জড়িয়ে পড়েছিলেন সমাজসেবায়। এয়ারক্রাফ্ট মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন দিল্লি থেকে। পেশায় ছিলেন নির্মাণ ব্যবসায়ী। মহেশ ও সরিতার উদ্যোগে গড়া হয় একটা প্রতিষ্ঠান – ইনস্টিটিউট অফ রিসার্চ এ্যান্ড এ্যাকশন (ইরা)। উদ্দেশ্য সমাজসেবা। প্রাথমিক ভাবে সরকার বা কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে তারা অর্থের জন্য হাত পাতেন নি। মহেশের ব্যবসার লাভের টাকাই ছিল তাদের সম্বল। গত চার বছরের প্রচেষ্টায় এরাই আমূল বদলে দিয়েছেন শব্দগাঁও সহ আশেপাশের আরও অনেক গ্রামের মানুষের জীবনধারা।
গ্রামের মানুষের জন্য তারা কাজ করতে চাইলেও গ্রামের মানুষের সাথে সম্পর্ক করাটা খুব সহজ হয়নি। গ্রামের মানুষ তাদের এড়িয়েই চলত—কেউ ভাবত ছেলেধরা, কেউ ভাবত জঙ্গি বা পুলিশের চর। শোনা যায় নকশাল জঙ্গিরা তাদের গ্রাম ছেড়ে চলে যেতে চাপ দিত। আশপাশের বৃহৎ ভূস্বামীরা তাদের প্রাণে মারার হুমকি দিত। মহেশ ও সরিতা কিন্তু দমে যায় নি, নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল ছিল তারা। গ্রামের বড়রা তাদের এড়িয়ে চললেও নিষ্পাপ কয়েকটি শিশুর সাথে তাদের ভাব হয়ে যায় একদিন। এরপর সরিতারা তাদের পড়াতে শুরু করে। এইসব শিশুরাই গ্রামে ফিরে গিয়ে বাবা-মাকে সরিতাদের কথা বলতে থাকে। আস্তে আস্তে গ্রামের মানুষের ভয় কাটে। কয়েক মাস পরে, বাবা-মায়েরাও আসতে শুরু করেন মহেশ-সরিতাদের ডেরায়। গ্রামের মানুষের সমস্যা ও উন্নয়ন নিয়ে শুরু হয় কথাবার্তা। এভাবেই জন্ম নেয় জীবনটাকে বদলে দেওয়ার এক নয়া অধ্যায়।
এরপর সরিতারা গ্রামের বাড়ীতে গিয়ে সভা করতে লাগলেন। বুঝলেন জলের সমস্যাই এলাকার সবথেকে বড় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান খুঁজতে গিয়ে মিলল সাড়ে তেরশো বছরের পুরানো বর্তমানে মজে যাওয়া এক সেচ ব্যবস্থার। বিশেষজ্ঞদের ডেকে এনে পরামর্শ নিলেন সরিতারা। তারপর শুরু হল কাজ। মহেশ-সরিতার নেতৃত্বে গাঁইতি কোদাল হাতে নেমে পড়ল গ্রামের মানুষ। আশপাশের গ্রামের মানুষও এ কাজে হাত লাগাল। কাটা হল পঁয়ত্রিশ কিলোমিটার লম্বা খাল। সংস্কার করা হল ১৭০টি মজা বিল। পাহাড় থেকে নেমে এসে বর্ষার জল জমা হয় এইসব বিলে। তা দিয়েই এখন চাষের কাজ চলে এলাকার তিনটি ব্লকের ১২০টি গ্রামে।
আল ভাঙো, ভাঙো আল
উৎপাদন বাড়াতে হবে এবার, তাই ভাঙতে হবে জমির আল। সরিতারা জানতো কাজটা কঠিন। আলের সাথে গ্রামের মানুষের প্রাণের সম্পর্ক। বিষয়টি বড়ই স্পর্শকাতর। জল পেয়ে গ্রামের মানুষ খুশী। তাই বলে আল ভাঙা, সে তো যেন হৃৎপিন্ডটাকেই উপড়ে ফেলা। সরিতাদের কথা প্রথমে কেউ মানতে চাইল না। লাভালাভের কথা ধৈর্য্য ধরে অনেক বোঝানোর পর অবশ্য তারা রাজি হল। কেটে ফেলা হল সব জমির আল। তৈরী হল টুকরো টুকরো জমি জুড়ে ১৭৫ একরের এক বিশাল কৃষিক্ষেত্র। শুরু হল সমষ্টি প্রথায় চাষ—কমিউনিটি ফার্মিং (Community Farming)। ফলে বেড়ে গেল ২৫ শতাংশ উৎপাদন। আর বন্ধ হয়ে গেল আল নিয়ে নিত্য লেগে থাকা কাজিয়া। আল কেটে জল চুরি নিয়ে প্রায়ই লেগে থাকত মারামারি। বন্ধ হয়ে গেল তাও। জমির আনুপাতিক হিসেবে সব কৃষক চাষের কাজে ভাগ নেন। ফসলও পান সেই অনুপাতে। শব্দগাঁওকে দেখে এখন পার্শ্ববর্তী অন্যান্য গ্রামের কৃষকরাও জমির আল ভাঙার কথা ভাবছে।
শুধু আল ভাঙাই নয়, শব্দগাঁওয়ের কৃষিজীবীদের জন্য চালু হয়েছে ইউনিফর্ম—সেনাবাহিনীর ওভার অল-এর মত। গাঢ় নীল রঙের সেই উর্দি পরেই কৃষকেরা মাঠে নামেন। কৃষিক্ষেত্র আজ তাদের কাছে রণক্ষেত্রে রূপান্তররিত হয়েছে। জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার আসল লড়াই তো এখানেই। গ্রামের দুই যুবক সেনাবাহিনীর কাছে শিখে নিয়েছে এই পোশাক তৈরীর কাজ।
এ কি স্বপ্ন?
আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন চেতনা জেগে ওঠে গ্রামের মানুষের মধ্যে। মদ খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। আগে যারা সন্ধ্যায় মদ খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকত তারা যায় গ্রাম কমিটির সভায় গ্রামের উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনায় যোগ দিতে। পাঁচ হাজার মহিলা বন্ধ্যাকরণের সিদ্ধান্ত নেয়, যদিও শেষ পর্যন্ত তা কার্যকর হয়নি সরকার ডাক্তার না পাঠাতে পারায়। তৈরী হয় মোরাম বিছানো সুন্দর রাস্তা। তৈরি হয়েছে স্কুল। এ গ্রামের সব শিশু এখন স্কুলে যায় একই ধরনের পোশাক পরে। আগে গ্রামে শৌচাগার বলে কিছুই ছিল না। গ্রাম কমিটির ব্যবস্থাপনায় সব বাড়ীতেই তৈরি হয় পাকা শৌচাগার। বাড়ির মহিলারাই এতে সব থেকে বেশি উপকৃত হন এতে কোন সন্দেহ নেই। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই ছিল খাটাল। এর ফলে দূষণ ও রোগ ছড়াত। তৈরি হয় ‘পশুধন ভবন’। বাড়ি থেকে খাটাল সরিয়ে ফেল সারা গ্রামের গবাদি পশু একসাথে সেখানেই রাখার ব্যবস্থা হয়। বলা বাহুল্য এ সবের পেছনেই ছিল মহেশ-সরিতার সক্রিয় ভূমিকা। তাদের হাত ধরেই শব্দগাঁও-এর মানুষ স্বপ্ন ছুঁয়েছে।
মহেশ-সরিতারা এখানকার মানুষের অর্থনৈতিক চালচিত্রটাই শুধু বদলে দেয়নি, বদলে দিয়েছে গ্রামের মানুষের মানসিকতাও। গ্রামের উন্নয়নের জন্য তারা নিজেদের উপর ভরসা করতে শিখেছে। শিখেছে মানব সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার। জাতপাতের কুরুক্ষেত্র জাঠ হয়েও মহেশ হয়ে উঠেছে যাদবদের ‘ভাইয়া’। মধ্য বিহারের কোন পুরুষ কোন মহিলাকে ‘প্রণাম’ জানায় না। ব্যতিক্রম ঘটেছে সরিতা ‘বহিন’-এর ক্ষেত্রে। বৃদ্ধরাও পথে দেখা হলে তাকে কড়জোড়ে প্রণাম জানিয়েছেন।
সন্ধ্যায় নিভল দীপ
আল ভেঙে যৌথ খামার গড়ার সময়ই মহেশ-সরিতার নজরে এসেছিল প্রতিবেশী রাজাবিঘা গ্রামের একটি দলিত সম্প্রদায়। রাজাবিঘার জনা তিরিশেক ‘মুশহর’ (অন্ত্যজ দলিত) সম্প্রদায়কে নিয়ে আড়াই একর জমি দিয়েছিল রজ্য সরকার। কিন্তু নিরক্ষর মুশহরদের বস্তিতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে ১৯৯২ সালে ওই জমি কব্জা করে নেয় স্থানীয় এক কুখ্যাত মাফিয়া। সরিতারা মুশহরদের একজোট করে জমি উদ্ধারে নামে। এই লড়াইয়ে জয় হয় মুশহরদেরই। প্রশাসন ও পুলিশ এনে জমি শেষ পর্যন্ত মাফিয়াদের কাছ থেকে উদ্ধার করে মুশহরদের হাতে তুলে দিতে পেরেছিলেন দুই লড়াকু যুবক-যুবতী। মাফিয়ারা হুমকি দিয়েছিল প্রাণে মেরে ফেলার।
গত ২৪ জানুয়ারী, ২০০৪ সন্ধ্যায় শব্দগাঁও থেকে ফতেপুরে ফেরার পথে দু’জনকেই গুলি করে হত্যা করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হত্যাস্থলের কাছের রাজাবিঘা ও জামহাটা গ্র্রামের কেউ গুলির শব্দ শুনেও ঘটনাস্থলে আসেনি। শব্দগাঁও-এর মানুষ ছুটে এসেছিল, রাত ১টা পর্যন্ত ছিল, যতক্ষণ না পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে যায়। ওইদিন মহেশ-সরিতা গ্রামে প্রজাতন্ত্র দিবসের আয়োজন নিয়ে গ্রামের মানুষের সাথে সান্ধ্য-বৈঠক করে। তারপর রাতের খাওয়া সেরে মহেশের মটরবাইকে দু’জনে ফতেপুরে যাবার জন্য গ্রাম ছাড়ে।


গ্রাম ছেড়ে যাওয়ার আগে গ্রামের মানুষের সাথে মহেশ ও সরিতা।

প্রিয়জনকে হারানোর ব্যাথায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সংবাদপত্রের রির্পোট পড়ে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ শব্দগাঁও-এ হাজির হন মহেশ-সরিতাকে শ্রদ্ধা জানাতে। অনেক অনুরোধেও যিনি কোন দিন এই গ্রামে পা রাখেন নি এমমনকি সেই ‘গরিবোঁ কি মসিহা’ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী লালু প্রসাদও ছুটে আসেন। হত্যার প্রতিবাদে বিরোধীদের ডাকে একদিন বন্ধও পালিত হয়। ২৫ জানুয়ারী, দু’জনের শবদেহ রাজ্যের রাজধানী পাটনায় শ্মশানে দাহ করা হয়। পাটনাতেই সরিতার স্বামী পুষ্পেন্দু কুমার সিং ও সন্তানেরা থাকত। মহেশের ভাই মনিকান্তও পাটনাতেই থাকত।
শোনা যায় হত্যার পেছনে মদ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতাদেরও মদত ছিল। যদিও ফতেপুর থানার এফআইআর-এ অভিযুক্ত হিসেবে রাজাবিঘা গ্রামের দু’জনের নাম ওঠে যারা সম্পর্কে ভাই-বুধন যাদব ও সাধু যাদব। ঘটনার পর দু’জনেই বেপাত্তা হয়ে যায়। রাজাবিঘা গ্রামের এই যাদব পরিবারের সাথে শব্দগাঁও-এর কিছু গোলমাল ছিল। এই হত্যার সাথে লালু প্রসাদের দল আরজেডি-র ফতেপুরের বিধায়কের নামও লোকের মুখে এমন ভাবে ঘুরতে থাকে যে তাকে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে তা বিরোধীদের প্রচার বলে ঘোষণা করতে হয়।
২৭ জানুয়ারী, লালু প্রসাদ এলাকায় গিয়ে সিবিআই তদন্তের কথা ঘোষণা করেন। আর ৫ই ফেফ্রুয়ারী গয়ার সিবিআই ডিরেক্টর জানিয়ে দেন তাদের হাতে এত কাজ রয়েছে যে তারা এখন এই দায়িত্ব নিতে পারছে না। সবটাই যে লোকদেখানো তা বুঝতে অসুবিধা হয়না। প্রসঙ্গত, সত্যেন্দ্র দুবের কথা মনে আছে নিশ্চয়ই পাঠকের। এই গয়া জেলারই ন্যাশানাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার প্রোজেক্ট ম্যানেজার থাকাকালীন দূর্নীতি নজরে এলে তিনি সরাসরি প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীকে চিঠি দিয়ে জানান। আর তার পরেই বিহারের গরিব ঘর থেকে উঠে আসা এই প্রতিভাবান সৎ ইঞ্জিনীয়ার খুন হয়ে যান। তদন্তের দায়িত্ব পায় সিবিআই। কিন্তু যে দু’জনকে সিবিআই জিজ্ঞাষাবাদ করেছিল তারা আত্মহত্যা করে। এই প্রতিবেদকের জানা নেই মহেশ-সরিতদের ক্ষেত্রে শেষপর্যন্ত কী ঘটেছিল।
‘Down To Earth’-এর এক অনুসন্ধান থেকে জানা গেছে-Hem Chand Sirohi, the media-savvy Commissioner of Magadh division (which includes Gaya) worked closely with Sarita and Maheshkant. Although Sirohi is one of the few persons who can throw light on the matter, he is incommunicado. Down To Earth’s efforts to contact him also proved futile. He has reportedly proceeded on a long leave. The day Laloo Prasad Yadav visited the area, Sirohi was seen telling local people not to talk to the media about the murders and mention only the good work the two had done. “How can you separate development efforts from politics?” asks an activist who was present.
এই হৈ-চৈ হয়ত একদিন থেমে যাবে। মহেশ-সরিতার স্মৃতি মুছে দেওয়ার চেষ্টাও চলবে। কিন্তু শব্দগাঁও আর তার লগোয়া গ্রামগুলির মানুষ কি ভুলতে পারবেন এই দুই আলোর দিশারী যুবক-যুবতীকে?
সাতচল্লিশে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর পঞ্চাশ বছরেরেও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। আজও এদেশে পঞ্চাশ ভাগ মানুষের অক্ষর জ্ঞান নেই। ছাব্বিশ শতাংশ মানুষের বাস দারিদ্র্য সীমার নীচে। উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরিসেবার অভাবে প্রতিবছর তিন লক্ষ মহিলা সন্তান জন্ম দেওয়ার সময়ই মারা যায়। প্রতি বছর পনের লক্ষ কন্যাশিশু মারা যায় বা তাদের মেরে ফেলা হয়। এক বছর পরোনোর আগেই আট লক্ষের জীবনকাল পাঁচ বছর পেরোয় না। যে দেশে স্বধীনতার এমন চমৎকার স্বাদ সে দেশে মহেশ-সরিতার মৃত্যু নেই। ওরা ফিরে আসবে অচিরেই।
কিন্তু মহেশ-সরিতাদের পাটনা থেকে গয়া জেলার প্রত্যন্ত এলাকা শব্দগাঁওয়ে পৌঁছানোর পেছনের ইতিহাসটা কী? ১৯৭০-’৮০-র দশকে গয়া জেলায় বড়সড় কৃষক আন্দোলন হয়েছিল এবং বোধ গয়ার প্রভাবশালী বৌদ্ধ পূজারীদের থেকে জমি দখল করে ভূমিহীনদের মধ্যে বিলি হয়েছিল। এই আন্দোলনে সরিতার কয়েকজন বন্ধু যুক্ত ছিল এবং সরিতা একসময় জমি দখল আন্দোলনের ফলে যারা উপকৃত হয়েছে তাদের অবস্থা পর্যালোচনা করতে এসেছিল। এই যোগসূত্র ধরেই মহেশ-সরিতারা ফতেপুরে আসে যখন তারা নিজেরাই কিছু করার কথা ভেবেছিল। এখানে তাদের সঙ্গী হিসেবে জুটে যায় দুই ভাই-দীনেশ ও সুরেশ রবিদাস। দীনেশ জমি আন্দোলনে যুক্ত ছিল। ভাই সুরেশ এখন রাজনৈতিক ভাবে এলাকায় সক্রিয়। তারা স্থানীয় একটি গ্রামে থাকত। দীনেশের বাড়ীতে থেকেই সরিতারা প্রথম কাজ শুরু করে। আগেই বলেছি শব্দগাঁও-এর মানুষের সাথে সম্পর্ক করাটা সহজ ছিলনা। স্থাননীয় নকশাল আর গ্র্রামবাসীরা তাদের পুলিশের ইনফরমার ভাবত আর পুলিশ তাদেরকে নকশালদের এজেন্ট হিসেবে দেখত।
দীনেশ আজও মনে করতে পারে-“They wanted children to go to school. What surprised them was that even when provided free education, children were not attending school”
পরে তারা বুঝতে পারল-…education didn’t appeal to empty stomachs. Why were food and nutrition inadequate? Because agriculture was in a bad state. This, in turn, was due to the lack of irrigation facilities. Sarita and Maheshkant began to think about ways to tide over the problem.
এর পর তো সবটাই ইতিহাস। তবে এই ইতিহাস রচনায় আর একজনের নামও গভীর ভাবে জড়িয়ে আছে-মগধ ডিভিশনের কমিশনার শিরোহী, যার সাহায্য না পেলে শব্দ গ্রামের ইরিগেশন প্রোজেক্ট সফল হওয়া সহজসাধ্য ছিলনা। শিরোহীর পরিকল্পনা ছিল শব্দকে একটি মডেল ভিলেজ তৈরি করা। কিন্তু মহেশ-সরিতার মৃত্যুর পর সাংবাদিকরা আর তার দেখা পায়নি। এই প্রতিবেদকের জানা নেই ২০২০ সালের এই মাঝামাঝি সময়ে শব্দগাঁও এখন কেমন আছে।

1 comment: