” “

Tuesday 30 June 2020

Santhal rebellion

The Santhal rebellion (sometimes referred to as the Sonthal rebellion), commonly known as Santhal Hool, was a rebellion in present-day Jharkhand, in eastern India against both the British colonial authority and zamindari system by the Santhal people. It started on June 30, 1855 and on November 10, 1855 martial law was proclaimed which lasted until January 3, 1856 when martial law was suspended and the movement was brutally ended by troops loyal to the British. The rebellion was led by the four Murmu Brothers - Sidhu, Kanhu, Chand and Bhairav.  https://en.wikipedia.org/wiki/Santhal_rebellion


সাঁওতাল বিদ্রোহ


প্রহ্লাদ রায়
‘হুল’ অর্থাৎ বিদ্রোহ। ১৮৫৫ সালের ৩০ জুন সাঁওতাল বিদ্রোহের অন্যতম দুই নেতা সিধু ও কানহু ভাগনাডিহির মাঠে হাজার হাজার সাঁওতাল ও হিন্দু-মুসলিম, চামার, বাগদি সহ নানান ধর্ম ও জাতের মানুষদের ইংরেজ ও ব্যবসায়ী-ব্যাপারীদের মাত্রাছাড়া শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক দিয়েছিলেন। এটা ছিল তথাকথিত নিচু জাতের মানুষদের বিদ্রোহ। ভারতের মাটিতে দলিত-আদিবাসীদের প্রথম সংগঠিত আন্দোলন।
http://www.thebackgroundd.in/
সাঁওতাল বিদ্রোহ: ভারতবর্ষে স্বাধিকার আদায়ের ইতিহাসে উজ্জ্বল মাইলফলক
https://roar.media/bangla/main/history/santhal-rebellion/

A Slave Changes History 480 BCE

It was a time when civilization in the West was divided between two cultures. The largest was the Persian centralized empire, which was based on having an all-powerful ruler with little regard for the individual. The other culture was much more dynamic but smaller and poorer; it was the emerging democracy of Greece. In spite of the fact that there were places in ancient Greece with dictatorial and oppressive city-states, such as Sparta, individual heroism was honored. It is a divide we still see today in the different values found in Iran, Iraq, and the other nations that are descended from ancient despots, and Western cultures that are descended from the Greek traditions.

In 480 BCE, things had not gone all that well for Xerxes, ruler of the Persian empire, particularly in regard to his invasion of Greece. His object was to revenge his father’s loss at Marathon and to incorporate the impudent and pugnacious Greek city-states into the Persian empire. The free city-states were both a direct threat and a threatening example to the many diverse peoples in his empire, especially those of Greek descent.

Prostitution In Ancient Greece And Rome

Although prostitution has long been a taboo subject, and is only recently beginning to emerge into open conversation, sex has always been for sale in human societies. It is a hugely complex issue, with a wide range of social, personal, political and even economic repercussions. Could looking at the sexual practices of the ancient Greeks and Romans help to open our eyes to new perspectives on prostitution?
https://www.thecollector.com/prostitution-ancient-greece-rome/?
An uncomfortable-looking stone bed from an ancient Roman brothel, via The Ludwig von Mises Centre

Monday 29 June 2020

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র

আয়ু’ শব্দের অর্থ ‘জীবন’ এবং ‘বের্দ’ শব্দের অর্থ ‘জ্ঞান’ বা ‘বিদ্যা’। ‘আয়ুর্বেদ’ শব্দের অর্থ জীবনজ্ঞান বা জীববিদ্যা। অর্থাত্‍ যে জ্ঞানের মাধ্যমে জীবের কল্যাণ সাধন হয় তাকে আয়ুর্বেদ বা জীববিদ্যা বলা হয়। আয়ুর্বেদ চিকিত্‍সা বলতে ভেষজ বা উদ্ভিদের মাধ্যমে যে চিকিত্‍সা দেয়া হয় তাকে বুঝানো হয়। এই চিকিত্‍সা ৫০০০ বছরের পুরাতন। পবিত্র বেদ এর একটি ভাগ - অথর্ববেদ এর যে অংশে চিকিৎসা বিদ্যা বর্ণিত আছে তা-ই আয়ুর্বেদ।  আদি যুগে গাছপালার মাধ্যমেই মানুষের রোগের চিকিসা করা হতো।এই চিকিত্‍সা বর্তমানে ‘হারবাল চিকিত্‍সা’ তথা ‘অলটারনেটিভ ট্রিটমেন্ট’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে এই চিকিত্‍সা বেশী প্রচলিত। পাশাপাশি উন্নত বিশ্বেও এই চিকিত্‍সা ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কারন মর্ডান এলোপ্যাথি অনেক ঔষধেরই side effect বা পার্শ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমনঃ ঔষধ সিপ্রোফ্লক্রাসিন, ফ্লুক্লক্রাসিলিন, মেট্রোনিডাজল, ক্লক্রাসিলিন প্রভৃতি ঔষধ রোগ সারানোর পাশাপাশি মানব শরীরকে দুবর্ল করে ফেলে এবং দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি, যৌনশক্তি, কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ার ইতিহাস পাওয়া যায়। কিন্তু তবুও দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য মানুষ এগুলো ব্যবহার করে চলেছে। পক্ষান্তরে ডাক্তারও ঔষধ ব্যবসায়ীগণ এসকল সাইড এফেক্ট পরওয়া না করে সুনামের জন্য অনবরত দেদারছে রোগীদের এসকল ঔষধ দিয়ে যাচ্ছেন। তাই এখন এ ঔষধের বিকল্প ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত হিসেবে বিশ্বে এখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে।   
https://bn.vikaspedia.in/health/

প্রসঙ্গ: আয়ুর্বেদ


রচনা: অভিষেক দে

লেখার শুরুতেই জানিয়ে রাখি, আয়ুর্বেদ নিয়ে আমার জ্ঞান সামান্য মাত্র। একজন বন্ধুর অনুরোধে এটা লিখছি। লেখায় কোনো তথ্যগত ভুল থাকলে অবশ্যই জানাবেন। সুস্থ সমালোচনা কাম্য।

আয়ুর্বেদই হচ্ছে ভারতের প্রাচীনতম চিকিৎসাশাস্ত্র বা চিকিৎসাবিজ্ঞান। তবে এই প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা কখনই দৈব-চিকিৎসা কিংবা জাদু-চিকিৎসা ছিল না। আয়ুর্বেদের ছিল বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।

অথর্ববেদে রোগ আরোগ্যলাভের জন্য মন্ত্র-কবচ-যাগ-যজ্ঞর ইত্যাদির উল্লেখ পাওয়া যায় বা এইসব তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতার গুণগান করা হয়েছে। আবার এই অথর্ববেদেই উদ্ভিদ ভেষজের দ্বারা রোগ নিরাময় ক্ষমতার কথা উল্লেখ আছে। মনে করা হয়, অথর্ববেদের আমলে মন্ত্রের অলৌকিক (!) ক্ষমতায় রোগমুক্তিতে বিশ্বাসী ভেষজ চিকিৎসায় বিশ্বাসীদের মধ্যে বিরোধীতা ছিল এবং ভেষজবাদীরাই শেষ পর্যন্ত আয়ুর্বেদ চিকিৎসাকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

অথর্ববেদে অনেক উদ্ভিজ্জ ওষুধের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন - পলাশ, কাম্পিল, জঙ্গির, বরণ, অর্জুন, বেতস, শমী, দূর্বা, যব, তিল, ইঙ্গিড়, তেল, জীরী, অলাকা, লাক্ষা, হরিদ্রা, পিপলকী, হরিতকি ইত্যাদি অনেক কিছুই।

অথর্ববেদের সময়কালে অলৌকিক চিকিৎসা (!) বা দৈব-চিকিৎসা (!) দুই- অবস্থান করেছিল। তার থেকেই আয়ুর্বেদ ( আয়ুর্বিদ্যা) বেরিয়ে এলো।
আয়ুর্বেদের আবির্ভাব নিয়ে দুটো কল্পকাহিনী প্রচলিত আছে। () ব্রহ্মা মানবশরীরের গঠনতন্ত্র বা এনাটমি বিষয়ে প্রথম শিক্ষা দেন দক্ষকে। দক্ষের কাছ থেকে শেখেন অশ্বিনী কুমারের দুই ভাই। তাদের কাছে শেখেন দেবরাজ ইন্দ্র। ইন্দ্রের কাছে শেখে ভরদ্বাজ মুনি।() ধন্বন্তরি কাশীরাজ ইন্দ্র বা তার শিষ্য ভরদ্বাজের কাছ থেকে শেখেন এবং এগিয়ে নিয়ে যান। দু’টো কাহিনীর চরিত্র যেহেতু কাল্পনিক, তাই এঁদেরকে ঐতিহাসিক চরিত্রের মর্যাদা দিয়ে আয়ুর্বেদের ইতিহাস খুঁজলে ভুল হবে।

খ্রীষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীর কাছাকাছি বেশ কয়েকজন আয়ুর্বেদ চিকিৎসকের নাম পাওয়া যায়। এঁরা হলেন- আত্রেয়, সুশ্রুত, জীবক এবং চরক। এঁরা ছিলেন বৌদ্ধ যুগের চিকিৎসক। আত্রেয় ছিলেন তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিদ্যার অধ্যাপক। উনি চিকিৎসা বিদ্যার ওপরে বেশ কয়েকটি গ্রন্থ লিখেছিলেন। যার ভেতরআত্রেয় সংহিতা’ উল্লেখযোগ্য।

সুশ্রুত ছিলেন শল্যচিকিৎসক। তাঁর লেখাসুশ্রুত সংহিতা’র প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল শল্যচিকিৎসা। সুশ্রুতের গ্রন্থের খ্যাতি ছিল বিশ্বজুড়ে। সুশ্রুত মানুষের শরীরের গঠনতন্ত্রের একটা নির্ভরযোগ্য চিত্র এঁকেছিলেন। এর থেকে স্পষ্ট উনি মানুষের শবব্যবচ্ছেদে অভ্যস্ত ছিলেন।

জীবক শল্যচিকিৎসক শিশু চিকিৎসক হিসেবে ভারতবর্ষে অদ্বিতীয় ছিলেন। তিনিকাশ্যপ সংহিতানামক নয় খন্ডের গ্রন্থ লিখেছিলেন। প্রাচীন বৌদ্ধ গ্রন্থত্রিপিটক’- আয়ুর্বেদ চিকিৎসক চরক-এর উল্লেখ রয়েছে। চরক-এর লেখাচরক সংহিতা’কে প্রাচীন আয়ুর্বেদের জ্ঞানকোষ এবং ঔষধ বিজ্ঞানের প্রামাণ্য গ্রন্থ হিসেবে ধরা হয়। আয়ুর্বেদের এই স্বর্ণযুগে বৌদ্ধ রাজারা আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের বা বৈদ্যদের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন।

প্রাচীন আয়ুর্বেদের আলোচনা মূলত আট ভাগে বিভক্ত। যেমন -
. কায়াতন্ত্র (সাধারণ চিকিৎসা)
এই শাস্ত্রের মূল ভিত্তি ছিল শরীর নিঃসৃত তিনটি রস- বায়ু, পিত্ত, শ্লেষ্মা। এই তিনটির যথার্থ সামঞ্জস্য বজায় রাখলে শরীরের সাধারণ রোগগুলোর আরোগ্য হবে এমনটাই মনে করা হত সেসময়। কোন রোগে কী ভেষজ ব্যাবহার করে এই সামঞ্জস্য আনা যাবে সেটাই ছিল কায়াতন্ত্রের প্রধান আলোচ্য বিষয়।
. শল্যতন্ত্র (শল্যবিদ্যা ধাত্রীবিদ্যা)
এই শল্যতন্ত্রের দুটি ভাগ- যন্ত্র এবং শাস্ত্র। যন্ত্রের সংখ্যা একশোর ওপরে শাস্ত্রে আছে নানান জটিল অস্ত্রোপচার পদ্ধতি। টনসিল থেকে হার্নিয়া, বিভিন্ন অস্ত্রোপচার, প্ল্যাস্টিক সার্জারি, অস্থিতে শল্যচিকিৎসা ইত্যাদি। এই অংশে মানবশরীরের গঠনতন্ত্র নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে।
. শালাক্যতন্ত্র
এতে আছে চোখ,কান,নাক গলার রোগ এবং চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা।
. ভূতবিদ্যা
এতে আছে মানসিক রোগ বিষয়ক চিকিৎসা।
. কৌমারভৃত্য
এতে আছে শিশুদের চিকিৎসা।
৬. অগদতন্ত্র
এতে আছে বিষ, বিষক্রিয়া তার চিকিৎসা নিয়ে আলোচনা।
৭. রসায়নতন্ত্র
এতে আছে  বার্ধক্যে স্বাস্থ্যরক্ষা বিধি।
৮. বাজীকরণতন্ত্র
এতে আছে  পুরুষত্বহীনতার চিকিৎসা।

আয়ুর্বেদের সুবর্ণযুগের পতনের শুরু বৌদ্ধ শাসক মৌর্যবংশের শেষ সম্রাট বৃহদ্রথের মৃত্যুর সাথেই। সম্রাট বৃহদ্রথকে গুপ্তহত্যা করে ব্রাহ্মণবংশজাত এক উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী পুষ্যমিত্র। সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের যেমন চাণক্য ছিলেন পরামর্শদাতা, তেমনই পুষ্যমিত্রর পরামর্শদাতা প্রধান রাজপুরোহিত ছিলেন ভরদ্বাজবংশিয় ব্রাহ্মণ পতঞ্জলি। বৌদ্ধ শাসনকে উৎখাত করে তিনি শুঙ্গরাজ বংশের প্রতিষ্ঠা ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জাত-পাতের অন্যতম কারিগর পতঞ্জলি শূদ্র্র্র নারীদের শিক্ষালাভের অধিকার কেড়ে নেন। মুক্তচিন্তার গতিকে অবরুদ্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টাও করেছিলেন। তাইতো উনি, সৃষ্টি করলেনযোগ’-এর। উনি আমজনতাকে বোঝালেন যোগ হচ্ছে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলন, পরমব্রহ্মের দর্শন, আত্মদর্শন ইত্যাদি। উনি এমনটা করেছিলেন সামন্তপ্রভু জাদু-পুরোহিত দের স্বার্থকে রক্ষা করতেই।

পতঞ্জলি, শল্যচিকিৎসার প্রতি ধিক্কার জানিয়ে দৈব ওষুধের (!) প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানালেন। বৈদ্যদের শব-ব্যবচ্ছেদ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গতি রুদ্ধ করলেন। তিনি আয়ুর্বেদ নির্দেশিত মানবদেহের এনাটমি জ্ঞানকে বাতিল করে যোগের এনাটমি ধারণার কাল্পনিক চিত্র আঁকলেন। কল্পনায় নিয়ে এলেন মানব মস্তিষ্কে হাজার পাঁপড়িযুক্ত ফুলের কুঁড়ির ওপরে ফণা মেলে থাকা সাপের উদ্ভট জিনিস অর্থাৎ যাকে ষটচক্র, কুণ্ডলিনীচক্র বলে। সঙ্গে জুড়লেন যেকোনো নারীর সঙ্গে দেহমিলনের নামে পরমব্রহ্ম (!) লাভের উপায়। যোগে যুক্ত হল নানান অলৌকিক (!) ক্ষমতা অর্জন করার মতন হিজিবিজি বিজ্ঞানবিরোধী বিষয়। উনি কুসংস্কারে মানুষকে আবদ্ধ করে রাখতে চাইলেন (এই ব্যাপারে আরও জানতে যোগের আকরগ্রন্থহটযোগ প্রদীপিকা’ পড়ে দেখতে পারেন)

ভারতীয় বৈদ্যদের চিকিৎসার মূল ভিত্তি -বায়ু, পিত্ত, শ্লেষ্মা ইত্যাদিকে বাতিল বা বিকৃত করে আবিষ্কার করলেন প্রাণায়াম নামক উদ্ভট তত্ত্বকে। যেখানে একটা নাকের ফুটো আঙ্গুলের দ্বারা বন্ধ রেখে আরেকটা ফুটো দিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চালানো। পতঞ্জলির এনাটমি জ্ঞান থাকলে জানতেন দুটো নাকের ফুটোই গিয়ে মিশেছে শ্বাসনালীতে এবং শ্বাসনালী যেহেতু একটাই, তাই নাকের ফুটো টিপে বন্ধ শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ে কিছুই লাভ হয়না। পতঞ্জলি আরও মনে করতেন জগৎ মানুষ দুই-ই পঞ্চভূত বা পাঁচটি মৌলিক পদার্থে তৈরি, বায়ু তারই একটা। উনি আবার বায়ুকেও পাঁচটি ভাগে ভাগ করেছিলেন। আয়ুর্বেদ ছিল বিজ্ঞান কিন্তু যোগ সম্পূর্ণরুপে অবৈজ্ঞানিক ব্যাপার। কোনো যোগীবাবা কিংবা যোগীমায়েরা কিংবা কোনো বিজ্ঞানী অথবা ডাক্তার যোগের পক্ষে কিছু লিখলেই সেটা বিজ্ঞানের দরবারে প্রতিষ্ঠিত হয়না। বিজ্ঞানের সহজ-সরল বিচার পদ্ধতি হল- পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত। যোগ এখনও বিজ্ঞানের দরবারে পাটাই রাখতে পারেনি, যেমনটা পারেনি -হোমিওপ্যাথি, ইউনানি,ম্যাগনেটোথেরাপি, এরোমাথেরাপি,রেইকি জেমথেরাপি ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয়।

এতক্ষনে আয়ুর্বেদ নিয়ে সামান্য আলোচনা করা হল যা অনেকেরই কাছে ধান ভানতে শিবের গীত গাওয়ার মতম ব্যাপার মনে হতেই পারে। কিন্তু আয়ুর্বেদ বিষয়টা এতোটাই বড় যে স্বল্প আলোচনায় বোঝানো সম্ভব নয়। তবুও একটা চেষ্টা করলাম।

এখন কোটি টাকার প্রশ্ন এটাই যে, বর্তমানে আমরা অর্থাৎ আমজনতা টিভি/পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপিত যেসব আয়ুর্বেদিক ছাপ দেওয়া ওষুধ ( Ayurvedic Proprietory Medicine) কিংবা বিভিন্নহার্বাল’ বা কবিরাজি ওষুধ বা জিনিসপত্র কিনে থাকি সেসব কতটা বিজ্ঞানসম্মত (Scientific)? সেখানে Ingredient হিসেবে যেসকল বস্তুর উল্লেখ করা থাকে, সেসব কি আদৌ থাকে?

২০০৫/০৬ সালে CPI(M) পলিটিব্যুরো নেত্রী বৃন্দা কারাট ঠিক এমনিই কিছু অভিযোগ তুলেছিলেন হটযোগী বাবা রামদেবের সংস্থা থেকে প্রস্তুত এবং বিক্রি হওয়া জিনিসগুলোর গুণগত মানের যাচাই এর জন্য। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সেই অভিযোগগুলো চাপা পড়ে যায়।

বর্তমানে দক্ষিণ ভারতে সিদ্ধা পদ্বতি নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত চর্চা হচ্ছে বলে তামিলরা দাবি করে যা আয়ুর্বেদেরই নামান্তর। একটা সময় ছিল যখন কবিরাজি ওষুধ রুপে বিখ্যাতস্বর্ণসিঁদুর’ খাওয়ার চল ছিলো। এমন বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যাক্তিকে ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি, যারা দাবী করেছেন এই ওষুধে বাস্তবেই স্বর্ণগুঁড়ো পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন সেটা অমিল।

Allopathy আয়ুর্বেদ, আর রসায়ন বিদ্যা থেকে আহুরু হয়েছে। প্রথম দিকে উদ্ভিদ আর খনিজ পদার্থ দিয়ে চিকিৎসা হত। পরে তা আরো উন্নত হয়েছে।

বাসক পাতার রসে Bromhexin নামে যে ক্যামিক্যাল থাকে তা শ্বাসনালী dialate করে। এটা আয়ুর্বেদে শ্বাসকষ্টে ব্যবহার করা হয়। এই bromhexin আবার cough সিরাপে থাকে। বাসকপাতার রস থেকে সহজ কথায় বললে ছেঁকে বার করা হত। পরে সহজে ফ্যাক্টরিতে maas production শুরু হয় যেখানে মোটেই বাসকপাতা লাগে না।

আবার এখন সরাসরি drugs তৈরি হচ্ছে জীবাণুর গঠনের উপর ভিত্তি করে।

Allopathy-
কে সময়ের সাথে অনেক ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এনাটমি-তে শরীরের গঠন সম্পর্কে আমরা জানি।প্রথমে Physiology Biochemistry এক সাথে পড়ানো হতো। পরে দুটো নতুন বিষয় হিসাবে প্রকাশ পায়। কারণ ক্রমাগত নিত্যনতুন গবেষণা বিষয়ের পরিধি বাড়িয়ে দিচ্ছিল।এটাই মডার্ন মেডিসিন। এলোপ্যাথি ক্রমাগত নিজেকে ভেঙ্গেছে আরো উন্নত করার জন্য কিন্ত প্রাচীন আয়ুর্বেদ নিয়ে যারা গলা ফাটায় তারা কিন্তু আদৌ চেষ্টা করেননি একে উন্নত করার। উলটে তাঁদের অনেকেই প্রাচীন তত্ত্বকেই আঁকড়ে ধরে রয়েছেন।

ফুটপাথে একটা বই বিক্রি হতে দেখেছেন হয়তো অনেকেই। নামগাছ গাছড়ায় ঘরোয়া চিকিৎসা’, চতুর্ভুজ পুস্তকালয়। এখানে বিভিন্ন প্রকার রোগ এবং তার প্রতিকার হিসেবে নানান গাছ-গাছড়ার প্রয়োগের উল্লেখ আছে। এখন এই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য আজকের দ্রুতগতির জীবনে এইসব উপকরণ সংগ্রহ করা এবং সঠিক পদ্ধতি মেনে সেসব ওষুধ তৈরি করা সত্যি দুরূহ ব্যাপার। তাছাড়া এমন অনেক গাছগাছড়া রয়েছে যাকে খুঁজে বের করাও বেশ কঠিন কাজ আমজনতার পক্ষে। পরীক্ষাগারে বা ল্যাবে কোনো ওষুধ বানানো কিংবা আবিষ্কারের পর সেটার গুণ যাচাই করা হয় ইঁদুর কিংবা গিনিপিগের ওপরে। এর পরে আসে মানবশরীরে (Human Body) সেটার প্রয়োগ। এই ওষুধ বানানো, পেটেন্ট নেওয়া কিংবা বাজারে বিক্রির জন্য সেসব ছাড়তে হলে Drugs Control Department এর কাছে ওষুধের গুণগতমান পরীক্ষার জন্য পাঠানোর পরে সেখান থেকে সবুজ সংকেত পেলে তবেই মেলে ছাড়পত্র (License) এই ছাড়পত্র ছাড়া কোনো ওষুধ বানানো কিংবা বিক্রি করা আইনত অপরাধ প্রতিটি ওষুধের গায়ে এর জন্য লাইসেন্স নং উল্লেখ থাকে সঙ্গে থাকে ব্যাচ নং-ও। কোনো ওষুধ খেয়ে কারোর যদি কোনো মারাত্বক রকমের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় (Side Effect) বা মৃত্যু ঘটে যায় তাহলে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারেন Drugs Control Department-এ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে রয়েছে কড়া শাস্তির ব্যাবস্থা। পাঁচ থেকে দশ বছরের জেল সঙ্গে মোটা অংকের আর্থিক জরিমানা।

বর্তমানে সমস্ত মর্ডান মেডিসিন Drugs Control Department-এর গাইডলাইন মেনেই প্রস্তুত করা হয়। তবুও একশ্রেণীর অসাধু ব্যাবসায়ীরা আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যথেচ্ছাচারে ওষুধ বানিয়ে বিক্রি করে চলেছে। সঙ্গে আসল ওষুধের বদলে একইরকম দেখতে নকল বা ভেজাল ওষুধেরও রমরমা বাজার আছে। নিন্দুকেরা অভিযোগ করেছেন, গলা পর্যন্ত দুর্নীতিতে ডুবে থাকা দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত এবং অপদার্থ সরকারের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ মদতেই এসব রমরমিয়ে চলছে, চলবে। ভারত সরকার ২০১৪ সালে গঠন করেনআয়ুষ মন্ত্রক’ (Ayush Ministry) AYUSH; A=Ayurveda, Y=Yoga-Naturopathy, U=Unani, S=Siddha, H=Homeopathy; বছর কয়েক আগে এতে Sowa-Rigpa নামক একটি চিকিৎসা পদ্ধতিও যুক্ত হয়েছে)এই বছরের জানুয়ারি (২০২০) মাসে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনসাধারণের উদ্দেশে জানানো হয় যে, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রতিরোধক হিসাবে হোমিয়োপ্যাথিক ওষুধ ‘Arsenicum album 30C’ ব্যবহার করলে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং করোনার সংক্রমণ ঠেকানো যাবে, এবং তাতে এই রোগের লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসায় একাধিক য়ুনানি দাওয়াই ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, করোনার সংক্রমণ তখনও ভারতে এসে পৌঁছায়নি।

মার্চ (২০২০) মাস নাগাদ ভারতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে আয়ুষ দপ্তর প্রমাদ গণতে থাকে। ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি নিয়ে ইতিমধ্যে চিকিৎসক, বিজ্ঞানীরা এবং যুক্তিবাদী মানুষেরা সরব হয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, এই ধরনের দাবির সাপেক্ষে কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। আয়ুষ দপ্তরও দ্রুত বুঝে নেয় যে, কয়েক হাজার মাইলের দূরত্বে বসে হোমিয়োপ্যাথি-য়ুনানি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া এক কথা আর দেশে আক্রান্তের সত্যিকারের চিকিৎসা সরবরাহ করা আরেক ব্যাপার। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনস্থ আয়ুষ মন্ত্রক থেকে দাবী জানানো হচ্ছে হোমিওপ্যাথি ARSENICUM ALBUM 30C এবং ALTOS নামক সংস্থার ‘AYUSH KWATH’ খেলে নাকি শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। লাগাতার প্রচার যেমন একটা কুমড়োর শ্যাম্পুকেও তুঙ্গে তুলে দিতে পারে তেমনই এই দু’টি জিনিসের জন্য আয়ুষ মন্ত্রক থেকে লাগাতার প্রচার চলছে। ALTOS AYUSH KWATH কিংবা ARSENICUM ALBUM 30C এর কতটা গুণ সেটা অবশ্য যাচাই কেউ করেছেন কিনা জানা নেই। কোনো ব্যাক্তি যদি চায় তাহলে কোনো সরকারি ল্যাবে এই দুটোর মার্শ টেস্ট করাতেই পারেন কিংবা Drugs Control Department- চিঠি করতেই পারেন এই ব্যাপারে। নিন্দুকেরা এই প্রশ্নও তোলা শুরু করেছেন, হোমিওপ্যাথি কিংবা এই তথাকথিত আয়ুর্বেদিক ওষুধের সেবনের ফলে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরেও যে, কোনো ব্যাক্তির শরীরে কোরোনা ভাইরাস এসে বাসা বাঁধবে না, তার গ্যারান্টি কোথায়? কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ মন্ত্রক কি দেবেন এই গ্যারান্টি? নিন্দুকেরা বলেন, এইসব হার্বাল নামধারী প্রোডাক্ট, চৈনিক চিকিৎসা, হোমিওপ্যাথি, ম্যাগনেটোথেরাপি, এরোমাথেরাপি, রেইকি বা হিলিং, জেমথেরাপি ইত্যাদি টিকে আছে উন্নত বিশ্বে নয়, বরং তৃতীয় বিশ্বে। এর জন্য দায়ী সরকারের উদাসীনতা কিংবা প্রত্যক্ষ পরোক্ষ মদত এবং অন্ধবিশ্বাসী জনগণের কারণেই।

আত্রেয়, সুশ্রুত, জীবক, চরকদের সেই সুবর্ণযুগ আজ নেই, আয়ুর্বেদ সেভাবে চেষ্টা করেনি নিজেকে উন্নত করার। অপরদিকে মর্ডান মেডিসিন নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে কিভাবে একে আরো উন্নত করা যায়। এতে অবশ্য কেউ কেউ পুঁজিপতিদের দায়ী করতেই পারেন। তবে এটাও সত্যি গলব্লাডারে স্টোন থেকে সিজারিয়ান ডেলিভারি কিংবা ক্যান্সারে কেমোথেরাপির জন্য যেমন হোমিওপ্যাথিতে কাজ হবেনা তেমনই তথাকথিত হার্বালেও কাজ হবেনা। এর জন্য মর্ডান সায়েন্সের কাছেই শেষে যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আয়ুর্বেদের বর্তমান চিকিৎসকরা হয়তো অপেক্ষারত, রামায়ণের সেই বিখ্যাত শুষেণ বৈদ্যর মতন কেউ আসবেন এবং আয়ুর্বেদকে প্রতিষ্টিত করতে মহাসঞ্জীবনী গাছের সন্ধান দিয়ে আয়ুর্বেদের সুবর্ণযুগ ফিরিয়ে আনবেন। ততদিন আমরাও না হয় আকাশকুসুম চিন্তা করি আয়ুর্বেদ নিয়ে।

          *  ফেসবুকে প্রকাশিত লেখাটি লেখকের অনুমতি নিয়ে প্রকাশ করা হল। ব্লগের পক্ষ থেকে একান্ত প্রয়োজনীয় কিছু সংশোধন করা হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি: পেশায় জাদুকর লেখক একজন মুক্তমনা ও বিজ্ঞানমনষ্ক। ফেসবুকেও তিনি অতি সক্রিয়।


Note from Admin: The current article begins with our new section-‘Traditional Medicine’. We’ll continue to publish more articles, news, etc in future on this issue.